“বেশী বকাঝকা করলে পাকিস্তান চলে যাব” হুমকি রশিদ খানের!



ওয়ানডেতে প্রথম স্পিনার হিসেবে ১০০ রান দিলেন রশিদ। এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কাও খেয়েছেন রশিদ। গড়েছেন আরও কিছু লজ্জার রেকর্ড।- প্রথম আলো

জনি বেয়ারস্টোকে আউট করেই হাতের পেশি দেখিয়ে দিলেন গুলবদিন নাইব। টিভি পর্দায় বেশ হৃষ্টপুষ্ট দেখাল সে পেশি, কুস্তিগিরদের সঙ্গেও মানিয়ে যায়। কিন্তু এ যে ক্রিকেট খেলা, এখানে বুদ্ধিও লাগে। আফগান অধিনায়কের পেশি দেখানো দেখেই হয়তো ইংলিশ অধিনায়ক এউইন মরগান পেশির শক্তি দেখানোতে মন দিলেন। আফগান বোলারদের সর্বনাশ ওতেই হলো। মরগানের রেকর্ড গড়া এক ইনিংসে ৩৯৭ রানের পর্বত গড়েছে ইংল্যান্ড।



বেয়ারস্টোর আউট হওয়ার ঘটনাটি ৩০তম ওভারে। ৯০ রান (৯৯ বলে) করে ফিরেছেন বেয়ারস্টো। ১২০ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তাঁর সঙ্গী জো রুটের রান তখন ৪৫। ৪৯ বলেই ৪৫ রান নেওয়ার ঘটনা বলছে, ইনিংস গড়ার কাজটা বেশ দ্রুতই করছিলেন রুট।

রুট এরপর যে রান তোলার গতি কমিয়েছেন তাও নয়। পরের ১৩ ওভারে ২৩ বলে ২৫ রান করেছেন। তবু তাঁর দিকে কারও নজরই যায়নি। কীভাবে যাবে? অন্যদিকে যে তাণ্ডব বাধিয়ে দিয়েছেন মরগান। রুটকে একপাশে রেখে বল শুধু গ্যালারিতে পাঠাচ্ছিলেন। রশিদ খানকে নিজের বোলিং ক্ষমতা নিয়েই সন্দেহে ফেলে দিয়েছেন একের পর এক ছক্কায়। ৩০তম ওভারের শেষ বলে নামা এক ব্যাটসম্যান ৪৩তম ওভারেই পেয়ে গেছেন সেঞ্চুরি। নিজের ১১তম ছক্কায় যখন সেঞ্চুরি পেরিয়েছেন, নামের পাশে তখন ৫৭ বল। ও, এই ১১ ছক্কার সঙ্গে ৩টি চারও ছিল।



বিশ্বকাপ এর চেয়েও দ্রুত সেঞ্চুরি দেখেছে। ২০১১ বিশ্বকাপে কেভিন ও’ব্রায়ান ৫০ বলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন। ২০১৫ বিশ্বকাপেও ৫১ ও ৫২ বলের সেঞ্চুরি দেখিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও এবি ডি ভিলিয়ার্স। আজ মরগানের তাণ্ডবে ২০০ থেকে ৩০০–তে পৌঁছাতে মাত্র ৫২ বলই লেগেছে ইংল্যান্ডের।

বিশ্বকাপে সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়তে না পারার দুঃখ একটু পরেই ভুলেছেন মরগান। সেঞ্চুরির পরও ছয় ছক্কা মেরেছেন ইংলিশ অধিনায়ক, ৩টি রশিদ খানের এক ওভারে। বাকি ৩টি ওই নাইবের বলেই। ওতেই হলো বিশ্ব রেকর্ড। ক্রিস গেইলকে টপকে ওয়ানডেতে এখন এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কা মরগানের। ৭১ বলে ১৭টি ছক্কা মেরেছেন, সে সঙ্গে ৪টি চারে তুলেছেন ১৪৮ রান।



আফগান অধিনায়ক তবু সান্ত্বনা পাবেন, মরগানের শেষ ৩ ছক্কার আগে-পরেই রুট ও মরগানকে একই ওভারে আউট করেছেন! ১০ ওভারে ৩ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি মাত্র ৬৮ রান দিয়েছেন। আজ অন্তত পেশি দেখিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছেন নাইব।

সাড়ে ৩০০ পার করার পর একটা ধস নেমেছে ইংল্যান্ড ইনিংসে। ৯ রানের মধ্যে রুট (৮৮), মরগান (১৪৮) ও বাটলার (২) ফিরে গেছেন দ্রুত। স্টোকসও ২ রান করতে ৬ বল খরচ করেছেন। কিন্তু এর মাঝেই রশিদের ‘সেঞ্চুরি’ হয়ে গেছে। ৯ ওভারে ১১০ রান দিয়ে থেমেছেন রশিদ।

দ্বিতীয় আফগান ও চতুর্থ বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে ১০০-র বেশি রান দিলেন রশিদ। বাকি তিন বোলার অবশ্য তাঁদের কোটা পূরণ করেছিলেন। বিশ্বকাপে সবচেয়ে রান দেওয়ার রেকর্ড এখন রশিদেরই। ওয়ানডেতেই তাঁর চেয়ে বেশি রান দিয়েছেন মাত্র একজন, অস্ট্রেলিয়ার মিক লুইস। আজ দশম ওভার করার সুযোগ পেলে রশিদের সে রেকর্ড গড়তে আর মাত্র ৪ রান খরচ করতে হতো।



শেষ দিকে ৯ বলে ৩১ রান তুলে মঈন আলী স্কোরটা ৪০০–র দিকে নিয়ে গেছেন। ২৫ ছক্কায় এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডও করেছে ইংল্যান্ড। ৮৫ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন দওলত জাদরান। মুজিব উর রহমান ১০ ওভারে ৪৪ রান দিয়েছেন, তথ্যটা অবিশ্বাস্যই ঠেকছে!

এটি নিয়ে অবশ্য তীব্র ক্ষিপ্ত আফগান ক্রিকেট বোর্ড। বিশ্বের সামনে আফগানিস্তানের মাথা হেট করে করে দেওয়ায় রশিদ খান সহ অন্যান্য খেলোয়াড়দের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কেউ কেউ।

তাই আফগান ক্রিকেট বোর্ড তাদের জন্যে অবশ্য আয়োজন করেছে ভিন্ন এক শাস্তির। তারা বলেছে যারা বিশ্বকাপে খারাপ খেলবে তাদের বাড়ি ফেরার টিকেট দেওয়া হবে না। যেভাবে খুশি বাড়ি ফিরবে তারা।

ম্যাচ পরবর্তী এক সম্মলেন বোর্ডের প্রধান জানান, রশিদ খান যা করছে তা রীতিমতো অপরাধ! সে ফিক্সিং করেছে এই বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আমরা তাকে এক অভিনব শাস্তি দিচ্ছি ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফেরার জন্যে তাকে আর বিমানে উঠতে দিচ্ছি না।এমনকি প্লেনের চাক্কায় উঠে যেতে না পারে তার জন্যে কড়া দৃষ্টি রাখছে বোর্ড। তাকে হেঁটে আফগানিস্তান যেতে হবে এটাই তার একমাত্র শাস্তি।

ইংল্যান্ড থেকে সে হেঁটে হেঁটে আফগানিস্তান ফিরবে কিভাবে? এটা নিয়ে অনেক কান্নাকাটি করে বিশ্বের সেরা শিশু অলরাউন্ডার রশিদ খান। তবুও শেষ রক্ষা হয় নি বেচারার।

ইউনিসেফ এবং হিউম্যান রাইটস শিশু নির্যাতন বন্ধে তীব্র সমালোচনা করে আফগানিস্তানের।



রশিদ খান ও ছেড়ে দেবার পাত্র নন। তিনি ফেইসবুক স্ট্যাটাসে দিয়ে জানান, ছোট বলে আমাকে যাচ্ছেতাই বলবেন তা হবে না। কি পেয়েছেন টা কি? হুম আমাকে। সব দোষ কি একা আমার? দল হারার জন্যে কি আমি দায়ী?

না। বেশি বকাঝকা করলে আর খেলবো না। দরকার পড়লে পাকিস্তান চলে যাবো। তবুও আফগানিস্তানে আর খেলবো না। সরফরাজ ভাই আমাকে দলে নেওয়ার জন্যে সাধাসাধি করছেন তবুও যাই নি। আর বেশি বকলে চলে যাব। আমাকে আর পাবেন না কিন্তু। তখন দেখবো কাকে বকেন হুম…



You may also like...